Homeবাংলাভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথালেজের মধ্যে শনি – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

লেজের মধ্যে শনি – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

पूंछ में शनि (भगवान हनुमान जी की कथाएँ) - शिक्षाप्रद कथा

প্রাতঃকালের সময় ছিল, হনুমান শ্রী রামের ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। শরীর-মনের কোন জ্ঞান ছিল না। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ পর্যন্ত তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন না। তাঁর থেকে কিছু দূরেই সূর্যপুত্র শনিদেবও বিচরণ করছিলেন। বারবার তিনি ভাবছিলেন-“কাউকে নিজের শিকার বানাই?” কিন্তু দূর-দূর পর্যন্ত কেউ তাঁর দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না। তাঁর বক্রদৃষ্টি জোয়ার-ভাটা থেকে ভিজে বালি পর্যন্ত যেখানে-যেখানে পড়ছিল, সেখানকারই বালি শুকিয়ে যাচ্ছিল। ফলে শনিদেবের অহংকার আরো বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

আচমকা শনিদেবের দৃষ্টি চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বিরাজমান হনুমানের ওপর পড়ল। শনিদেব মনে মনে বললেন-“শিকার পেয়ে গেছি! নিঃসন্দেহে এটি একটি বানর, কিন্তু জীব তো বটেই।”

কুটিলতার সাথে হেসে শনিদেব হনুমানের দিকে এগিয়ে চললেন। দূর থেকে তিনি ডাকলেন-“আরে ও বানর! শীঘ্রই চোখ খোল। দেখ, আমি তোর সুখ শান্তি নষ্ট করতে এসেছি। আমি সূর্যপুত্র। এই সৃষ্টিতে এমন কেউ নেই, যে আমার সমকক্ষ।”

শনি ভাবছিলেন যে তাঁর নাম শোনা মাত্রই হনুমান মাথা থেকে পা পর্যন্ত কম্পিত অবস্থায় তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়বেন। নিজের প্রাণের ভিক্ষা চাইবেন, কিন্তু এমন কিছুই হলো না। হনুমান ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। ক্রোধের বশে কালো হয়ে যাওয়া শনিদেবকে দেখলেন। তারপর  চেহারার মধ্যে অবাক ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-“মহারাজ! আপনি কে? এই তপ্ত বালির ওপর কি করছেন? বলুন, আমি আপনার কি সেবা করতে পারি?”

হনুমানের কথা শুনে শনিদেব রাগে লাল-হলুদ হয়ে বললেন-“আরে মূর্খ বানর! আমি ত্রিলোককে ভয়ভীত করা শনিদেব হই। যার রাশির উপর আমার পদক্ষেপ পড়ে,ৎসে দৈত্য হোক বা মানব, ইন্দ্র হোক বা কুবের, সবাই ধরাশায়ী হয়ে যায়। আজ আমি তোর রাশিতে প্রবেশ করতে চলেছি। সাহস থাকে তো আমাকে আটকা!”

হনুমান হেসে বললেন-“আপনার নাকের উপর তো রাগ খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে মহারাজ। আমি বৃদ্ধ বানর, আপনি যুবা সূর্যপুত্র! কি খেয়ে আপনাকে আটকাবো? প্রার্থনাই করতে পারি যে ব্যর্থ ক্রোধ ত্যাগ করুন। অন্যত্র  কোথাও গিয়ে নিজের পরাক্রম প্রদর্শন করুন। আমায় নিরিবিলিতে শ্রী রামের আরাধনা করতে দিন।”

শনিদেব আরো রেগে উঠলেন। এক পা আগে এগিয়ে বললেন-“যখন পিঁপড়ের মৃত্যু আসে তখন তার ডানা বের হয়। তোরও খারাপ দিন নিশ্চিত।”

এটা বলে শনিদেব আগে এগিয়ে হনুমানের বাহু ধরে ফেললেন এবং নিজের দিকে টানতে লাগলেন। হনুমানের মনে হল, যেন তাঁর বাহু কোন জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর রেখে দেওয়া হয়েছে। এক ঝটকায় তিনি নিজের বাহু শনিদেবের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। শনিদেব ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে তাঁর দুটো বাহু ধরতে চাইলেন তখন হনুমানের ধৈর্য ভেঙে গেল। গর্জে উঠে বললেন-“মেনে নিলাম, তোমার দুষ্টতার কোনো অন্ত নেই। তোমার সাথে এবার লড়াই করতেই হবে।”

ব্যাস, হনুমান শ্রীরামের নাম নিয়ে নিজের লেজ বাড়াতে আরম্ভ করে দিলেন। লেজ বাড়াতে থাকলেন এবং তাতে শনিদেবকে জড়িয়ে ফেলতে লাগলেন। শক্তির অহংকারে মত্ত শনিদেবের শুরু-শুরু তে কোন জ্ঞান ছিল না। যখন জ্ঞান হলো, ততক্ষনে হনুমান তাঁকে পুরোপুরি নিজের লেজে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।

শনিদেব পুরো শক্তি লাগিয়ে লেজের বাঁধন ভাঙ্গার জন্য চেষ্টা করছিলেন এবং হনুমান তাঁর অসহায়তার ওপর জোরে জোরে হেসে উঠছিলেন।

শনিদেবের অহংকার এখনো অব্দি শেষ হয়নি। চিৎকার করে বললেন-“তুমি তো কি শ্রীরামও আমার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। দেখতে থাকো, আমি তোমার কি দুর্গতি করি।”

শ্রীরামের নামে শনিদেবের অভিযোগ শুনে, হনুমান কঠোর হয়ে গেলেন  তিনি লাফিয়ে-লাফিয়ে সমুদ্রতটের ওপর দ্রুত দৌড়ানো শুরু করে দিলেন। তাঁর লম্বা লেজ কোথাও শিলার সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল, কোথাও বালির ওপর গড়িয়ে যাচ্ছিল তো কোথাও সূচালো শাখার বৃক্ষ এবং কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড়ের সাথে রগড়ে যাচ্ছিল।

লেজে জড়িয়ে শনিদেবের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছিল। তাঁর বস্ত্র ছিঁড়ে গেছিল। সারা শরীরে চোট লেগেছিল। পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে তিনি আধমরা হয়ে গেছিলেন এবং হনুমান ছিলেন যে সমুদ্রের ওপর চক্করের পর চক্কর লাগিয়ে চলেছিলেন। মুহূর্ত মাত্র না কোথাও থামছিলেন, না পিছন ফিরে ছটপটানো অবস্থায় শনিদেবকে দেখছিলেন।

রক্তাক্ত শনিদেব কাতর স্বরে সূর্যদেবকে ডাকলেন। মনে মনে অনেক দেবী-দেবতাদের স্মরণ করলেন, কিন্তু কোনো স্থান থেকেই তিনি কোনো সহায়তা পেলেন না। পেতেনই বা কি করে ? শনিদেব কখনো কারোর কোনো ভালো করতেন, তবেই তো কেউ তাঁর পক্ষে কিছু বলতেন বা করতেন।

অবশেষে কাতর স্বরে শনিদেব হনুমানকে ডাকলেন-“দয়া করো বানররাজ! আমি আমার দাম্ভিকতার ফল পেয়ে গেছি। আমার প্রাণ নেবেন না। আমি কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আপনার ছায়ার থেকেও দূরে থাকবো।”

হনুমান শনিদেবকে আরেকবার ধাক্কা দিলেন। বললেন-“একা আমার ছায়ার থেকেই নয়, আমার ভক্তদের ছায়া থেকেও দূরে থাকতে হবে। ঝটপট “হ্যাঁ” বলো নয়তো আরেকটা ধাক্কা আর…”

“ঠিক আছে, ঠিক আছে!” শনিদেব বেদনায় ছটফটিয়ে উঠে বললেন-“আপনার ভক্ত কেন, যে ব্যক্তির মুখ দিয়ে আপনার নাম নির্গত হবে, তার আশেপাশেও আমি যাব না। কৃপা করে আমায় ছেড়ে দিন।”

শনিদেবের কথা শুনে হনুমানের রাগ শান্ত হলো। তিনি শনিদেবের ওপর জড়ানো নিজের লেজটা সরিয়ে নিলেন এবং বললেন-“যাও, আমি তোমায় মুক্ত করলাম।”

শনি নিষ্প্রাণসম সমুদ্রের বালির ওপর গিয়ে পড়লেন। তারপর দাঁড়িয়ে হনুমানের পা ধরে বললেন-“আমায় ছেড়ে দিয়ে আপনি বড় কৃপা করেছেন। এবার আরেকটি কৃপা করুন।”

হনুমান বললেন-“কৃপা তো শ্রীরাম ককরবেন। তাও বলো, কী চাই! শ্রী রামের ভক্তি ছেড়ে দিয়ে যা চাইবে, প্রদান করব।”

শনিদেব কঠিন হয়ে বললেন-“শরীরের ওপর লাগানোর জন্য সামান্য তেল প্রদান করুন। যাতে ঘাগুলি সেরে ওঠে।”

হনুমানের কাছে তেল কোথায় ছিল, যে শনিদেবকে দিতেন। সামনের একটি বস্তি থেকে তেল নিয়ে এসে তিনি শনিদেবের সম্পূর্ণ শরীর ভিজিয়ে দিলেন।

তখন থেকেই শনিদেবের ওপর যে ব্যক্তি তেল প্রদান করে, শনিদেব তার উপর প্রসন্ন হন। তবে হ্যাঁ, হনুমানের ভক্তদের তিনি আজও অবধি কষ্ট দেন না।

 

Translation By:
Poulami Poddar
[email protected]