কলসি ভর্তি সিঁদুর – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা
হনুমান বড়ই আশ্চর্য হয়েছিলেন। এখনো পর্যন্ত শ্রী রাম কখনোই কোন কথাতে তাঁকে “না” বলেন নি। কিন্তু সেই দিন কেন জানি না তিনি বার-বার হনুমানের প্রস্তাবকে নাকচ করছিলেন।
বিষয়টি খুবই ছোট ছিল। শ্রীরাম কখনো-কখনো সশরীরে স্বর্গ ভ্রমণে যেতেন। ঐদিন হনুমানের ও মন আনচান করে উঠল যে গিয়ে একবার দেখা উচিত স্বর্গ কেমন , শুনেছি, সেখানে কল্প বৃক্ষ আছে, কামধেনু আছে ,এবং জানি না আরো কত কিছু আছে? কথাটি যখন মনে হল তিনি ভগবানের সামনে প্রস্তাব করে বসলেন। তাঁর থেকে কি লুকানোর এবং যখন শ্রীরাম সর্বদা তাঁর সব কথা মানতেন তখন এর জন্য না কেন করবেন?
কিন্তু এইবার কথাটি জমল না। কিন্তু সাহস হারিয়ে ফেলবে তো হনুমান কিসের? তিনি পুনরায় সাহস সঞ্চারিত করলেন এবং বললেন-“আমাকেও একবার সাথে নিয়ে চলুন। কি সমস্যা আছে এতে?”
শ্রীরাম বললেন-“ হনুমান সমস্যা অনেক আছে। তুমি আমার সাথে যেখানে চাও , যেতে পারো। যাওও, কিন্তু স্বর্গ ধাম যেতে পারবে না। সেখানে আমার সাথে কেউ যেতে পারবে না।”
হনুমান জিজ্ঞাসা করলেন-“তো ইনি কেন যাচ্ছেন?”
রাম বললেন-“ ইনি কে?”
“মা, সীতা মা।” হনুমান নিজের ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করলেন। দেখি, এবার শ্রীরাম কি উত্তর দেন। এই তর্কের তো কোন সদুত্তর থাকবে না তাঁর কাছে।
শ্রীরাম কিছুক্ষনের জন্য আশ্চর্য হয়ে রইলেন। হনুমান এক বড় প্রশ্নের সম্মুখে তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বললেন-“তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছ না?”
“কি?” হনুমান কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে বসলেন।
শ্রীরাম বললেন-“ নিজের মায়ের মাথার এই সিঁদুরের রেখা। এই শক্তির আধারেই ইনি আমার সাথে যে কোন স্থানে, যে কোন সময় যেতে পারেন।”
এটা শুনে হনুমান ভাবতে লাগলেন,” তো এত কেরামতি এই এক চুটকি সিঁদুরের, যা সীতা মাকে সর্বদা শ্রীরামের সম্মুখে উপস্থিত রাখে। তিনি তাঁর সাথে যে কোন স্থানে যেতে পারেন।”
তিনি এটাই ভাবছিলেন কি তখনই ওনার মাথায় বিদ্যুৎসম চমকে উঠল। তিনি তৎক্ষণাৎ বাজারের দিকে দৌড়লেন। একটি দোকানে ঢুকে পড়লেন। সিঁদুরের একটি পাত্র থেকে এক চুটকি সিঁদুর নিলেন এবং নিজের মাথাতে লাগাতে লাগলেন। কিন্তু সিঁদুরের ওখানে টেকার ছিল না, তাই টিকলো না। লোম ভরা তাঁর ললাটে সীতা মাতার মত সিঁদুরের রেখা তৈরি হতোই বা কি করে?
এক মুহূর্তের জন্য হনুমান নিরাশ হলেন। সুসম্পন্ন একটি কাজ বিগড়ে যাচ্ছে। সিঁদুর ধারণ না করতে পারলে স্বর্গ যাবেন কি করে ?
সাহসের অপর নামই হনুমান। একটা কথা তৎক্ষনাত তাঁর মাথায় এলো,” যদি এক চুটকি সিঁদুর তাঁর মাথায় ধারণ না হয় তো না হোক। পুরো শরীরই লাল করে নেবেন।” তিনি না এদিক দেখলেন না ওদিক, পুরো কলসিই নিজের শরীরের ওপর ঢেলে দিলেন। তিনি প্রসন্নতা পূর্বক সড়কের ওপর দৌড়ে চললেন। সম্পূর্ণ শরীর সিঁদুরে ঢেকে গিয়েছিল। এখন শ্রী রাম কি করে তাঁকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে আটকাবেন? কিন্তু কিছুক্ষণ পরই হনুমানের খুশির অবসান ঘটল। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত সিঁদুর ঝরে গেছিল। পিছনে সড়কে দূর পর্যন্ত একটি সিঁদুরের রেখা নির্মিত হয়েছিল।
হনুমান এইবার হতাশ হয়ে পড়লেন। মনে হচ্ছে এই সিঁদুর তাঁর সাথে ছলনাই করতে থাকবে। স্বর্গ ভ্রমণের ইচ্ছা কি তাহলে মনেই থেকে যাবে? হনুমান ভাবলেন,” এবার বিশেষ কিছুই করতে হবে।” অবশেষে তিনি একটি উপায় বের করলেন। এটি অচুক ছিল। দেখি এবার কিভাবে এই লাল রঙের বস্তুটি তার শরীর থেকে ঝরে যায়?
প্রথমে তিনি এক তেলের ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকলেন। সরষের তেলের একটি পুরো কূপ নিজের শরীরের ওপর ঢেলে নিলেন। পা পর্যন্ত সমস্ত লোম তেলের দ্বারা ভিজে গেছিল। তারপর তিনি একটি মুদির দোকানে গেলেন এবং সিঁদুরের দ্বিতীয় কলসি শরীরের ওপর ঢেলে নিলেন। তেল ভর্তি লোমে সিঁদুর আটকে গেল। এইবার কি করে আর কিভাবে সিঁদুর ঝরে পড়তো? সেই বেশেই তিনি সড়কের ওপর জোরে দৌড়াতে লাগলেন। পিছনে ঘুরে দেখলেন যে সিঁদুরের একটি কণাও শরীর থেকে ঝরে পড়েনি। পুরো শরীর লাল হয়ে গেছিল। বিষয়টি এবার জমে উঠেছিল। প্রসন্ন চিত্তে তিনি জোরে হেসে উঠলেন
এবং শ্রী রামের আবাসের দিকে দৌড়ে চললেন।
“কে?” শ্রীরাম তাঁকে চিনতে পারলেন না।
“হনুমান।” তিনি ছোট উত্তর দিলেন।
শ্রী রাম আশ্চর্য হয়ে বললেন-“ হনুমান তুমি? কিন্তু একি? সারা শরীর সিঁদুরে ঢাকা কেন?”
হনুমান গম্ভীর হয়ে বললেন-“ যদি সীতা মা এই সামান্য সিঁদুরের শক্তির দ্বারা আপনার সাথে স্বর্গ যেতে পারেন তবে সম্পূর্ণ শরীরে সিঁদুর সাজিয়ে আমি কেন যেতে পারবো না?”
শ্রীরাম হেসে বললেন-“অবশ্যই, অবশ্যই যেতে পারো তুমি।”
কথিত আছে, তখন থেকেই হনুমানের শরীরে সিঁদুর সাজানোর পরম্পরা চলতে শুরু করে, যা আজ পর্যন্ত চলে আসছে।
Translation By:
Poulami Poddar
[email protected]