Homeবাংলাভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথাভীমের অভিমান ভঙ্গ – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

ভীমের অভিমান ভঙ্গ – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

भीम का अभिमान भंग (भगवान हनुमान जी की कथाएँ) - शिक्षाप्रद कथा

একবার অর্জুন ভগবান শঙ্করের তপস্যা করতে হিমালয়ের জঙ্গলে চলে গিয়েছিলেন এবং শিবের ঘোর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। তাঁর তপস্যায় শিব প্রসন্ন হলেন এবং বরদান স্বরূপ তাঁকে পাশুপত নামক অস্ত্র দিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং অমরাবতী থেকে তাঁর কাছে পৌঁছলেন এবং তাঁকে নিজের সাথে অমরাবতী নিয়ে এলেন। অর্জুনের অনুপস্থিতিতে যুধিষ্ঠির নিজের শেষ ভাইদের, মাতা কুন্তী তথা দ্রৌপদীকে সাথে নিয়ে বদ্রিকা আশ্রম পৌঁছলেন এবং সেখানে বাস করতে লাগলেন।  একদিন বায়ুর প্রবল বেগে উড়ে এসে হিম সরোবরে প্রস্ফুটিত ব্রহ্ম কমলের ফুল উপর থেকে উড়ে এসে পান্ডবদের সামনে পড়ল। দ্রৌপদী পুষ্পটি উঠালেন এবং ভীমকে দিয়ে অনুরাগ ভরা স্বরে বললেন-“আর্যপুত্র! এত অদ্ভুত পুষ্প আমি নিজের জীবনে এর আগে কখনো দেখিনি। আপনি কি আমার জন্য এইরকম দ্বিতীয় একটি পুষ্প নিয়ে আসতে পারবেন? আমি এই দুই পুষ্প দিয়ে নিজের বেণীতে সাজাবো।”

ভীম নিজের বড় ভাই যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকালেন। এবং চোখের সংকেত পেয়ে দ্রৌপদীকে বললেন-“ হ্যাঁ, হ্যাঁ কেন নয়? আমি তোমার জন্য এই পুষ্পর জোড়া অবশ্যই নিয়ে আসবো পাঞ্চালি! সে আমি যেই স্থানেই এই পুষ্প পাই না কেন।”

দ্রৌপদী ভীমের কথা শুনে প্রসন্ন হলেন। তিনি প্রসন্ন মুদ্রায় ভীমকে বললেন-“ তাহলে এনে দিন না আর্যপুত্র! এই পুষ্পটিকে আমি তখনই নিজের বেণীতে লাগাবো, যখন এই রকমই দ্বিতীয় একটি পুষ্প চলে আসবে।”

ভীম নিজের গদা ওঠালেন এবং ব্রহ্মকমল আনতে উত্তর দিকে প্রস্থান করলেন। তিনি ভয়ঙ্কর গর্জন করতে করতে আগে এগোতে লাগলেন। তাঁর হুংকারে বনের অন্য প্রাণীরা ভয়ভীত হয়ে এদিক ওদিক পালাতে লাগল।

ইহা দেখে হনুমান চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি সেই সময় সেখানেই বিশ্রাম করছিলেন। তিনি ভাবলেন, ‘ভীমও পবন দেবের বরদানের দ্বারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই কারণে তিনি আমার অনুজ ভ্রাতা। যেই বেগ, হুংকার, গর্জনের দ্বারা বনের ক্ষেত্রকে কাঁপিয়ে তিনি আগে এগোচ্ছেন, এতে তাঁর কোনো বিপদ হতে পারে। তিনি জানেন না যে তাঁর গর্জনের দ্বারা বরফের শিখরে জমে থাকা বরফ ভেঙে-ভেঙে নিচে পড়বে এবং এতে তাঁর বিপদ হতে পারে।

ইহা ভেবে হনুমান নিজের স্থান থেকে উঠে বৃদ্ধর বেশ ধারণ করে ভীমের রাস্তায় এসে শুয়ে পড়লেন। নিজের আকার এবং বিশাল লেজের দ্বারা তিনি ভীমের রাস্তা আটকে দিলেন। ভীম হনুমানের কাছে পৌঁছলেন এবং নিজের রাস্তা অবরুদ্ধ দেখে রেগে গেলেন। তারপর তিনি হনুমানকে বললেন-“ আমার রাস্তা থেকে সরো বানর! তুমি তো সম্পূর্ণ রাস্তা ঘিরেই পথে শুয়ে পড়েছ।”

হনুমান নিজের মাথাটি ঘোরালেন এবং ভীমের দিকে তাকিয়ে বললেন-“ যুবক আমি অসুস্থ! এখানে কিছুক্ষন শুয়ে থেকে বিশ্রাম করছিলাম। তুমি আমাকে ঘুম থেকে কেন জাগিয়ে দিলে?”

ভীম রেগে গিয়ে বললেন-“ বিশ্রামই যদি করতে হয়, তবে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে কোনো সুরক্ষিত স্থানে গিয়ে করো। মধ্য রাস্তায় শুয়ে বিশ্রাম করা কোন্ প্রকারের বুদ্ধিমানের কাজ?”

হনুমান বললেন-“ আমিতো তোমাকে বললাম যে আমি অসুস্থ। নিজের জায়গা থেকে নড়তে আমি অক্ষম। কিন্তু তুমি কে যুবক এবং এই শুনশান জায়গায় কি কারনে বিচরণ করছো?”

ভীম বললেন-“ আমি যেই হই না কেন তোমার কি দরকার? আমায় আগে যেতে হবে, তুমি আমার রাস্তা থেকে সরে যাও।”

হনুমান বললেন-“কি করে সরে যাব দাদা? শরীরে তো শক্তি নেই নড়বার।”

ভীম বললেন-“ তো আমি আগে কি করে যাব? তোমায় টপকে গেলে আমার পাপ হয়ে যাবে।”

হনুমান বললেন-“ পাপ লাগবার মত কোনো বিষয় নেই। তুমি আমার লেজটিকে কিছুটা একদিকে সরিয়ে দাও এবং রাস্তা বানিয়ে প্রস্থান করো।”

ভীম ঝুঁকে গিয়ে এক হাত দিয়ে হনুমানের লেজটি ধরে একদিকে রেখে দিতে চাইলেন। কিন্তু লেজটি নিজের স্থান থেকে নড়লো না পর্যন্ত। তারপর তিনি নিজের দুটি হাত দিয়ে লেজটি ধরে ওঠাতে আরম্ভ করে দিলেন। কিন্তু লেজটি যেন মাটির সাথে আটকে গেছিল। ভীমের সম্পূর্ণ শক্তি লাগানোর পরও তা বিন্দুমাত্র সরলো না। ভীমের সারা শরীর ঘামে আর্দ্র হয়ে গেছিল। শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে ভীম উঠে দাঁড়ালেন এবং হতাশ স্বরে বললেন-“বানররাজ! আপনার লেজ আমার দ্বারা উঠছে না। আমি নিজের হার স্বীকার করছি। কিন্তু আমায় নিজের সঠিক পরিচয় দিন। আপনি সাধারণ বানর হতে পারেন না।”

হনুমান বললেন-“ তুমি ঠিকই বুঝেছ ভীম। আমি পবনপুত্র হনুমান। ভগবান রামের একজন তুচ্ছ সেবক।”

হনুমানের নাম শুনে ভীম তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়ে বললেন-“ ক্ষমা করুন পবনপুত্র। আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আমি আপনাকে কোনো সাধারন বানর ভেবেছিলাম।”

হনুমান উঠে দাঁড়ালেন। তিনি ভীমকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন-“আমি তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম ভীম। তুমি বাস্তবেই একজন শক্তিশালী। কিন্তু তোমার নিজের শক্তির উপরে অহংকার হয়ে গেছিল। এই কারণে এই অহংকারের দমন করা আমার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়েছিল।”

ভীম বললেন-“ অহংকার তো আপনাকে দেখার পরেই কখন সমাপ্ত হয়ে গেছে, পবনপুত্র। আপনার দর্শন পেয়ে আমি কৃতার্থ হয়ে গেছি।”

হনুমান বললেন-“ এই নির্জন বরফে ঢাকা স্থানে কোথায় যাচ্ছ ভীম? এই পথ তো অসংখ্য বিপদে ভরে রয়েছে।”

ভীম বললেন-“ বিপদের সাথে খেলে আমার আনন্দ হয় পবনপুত্র। বাল্যকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি বিপদের সাথেই খেলে আসছি। কিন্তু এইবার একটি বিশেষ কাজের জন্য এখানে এসেছি। দ্রৌপদীর ইচ্ছা ছিল যে আমি এই ব্রহ্মকমলের মতো দ্বিতীয় আরেকটি পুষ্প তাঁকে এনে দি।”

ব্রহ্ম কমলের কথা শুনে হনুমান গম্ভীর হয়ে বললেন-“ ভীম! ব্রহ্মকমল নামক এই পুষ্প আগে একটি সরোবরে ফুটতো এবং সেই সরোবরকে একজন যক্ষ রক্ষা করে। যক্ষ দেবরাজ ইন্দ্রের সেবক। পুষ্পটি নিতে গিয়ে তোমাকে যক্ষের সাথে যুদ্ধও করতে হতে পারে।”

ভীম বললেন-“ নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য আমি যক্ষের সঙ্গে তো কি দেবরাজ ইন্দ্রের সাথেও লড়াই করতে পারি। আমি তো তবে আপনার আশীর্বাদ চাই পবনপুত্র।”

হনুমান ভীমকে আশীর্বাদ করলেন এবং পদ্ম সরোবরে যাওয়ার পথটি বলে দিলেন। বললেন-“কিছুটা আগে যাওয়ার পর তুমি একটি সরোবর দেখতে পাবে,যেখানে এই পুষ্প ফোটে। যক্ষ যদি এই পুষ্পটি নিতে বাধা দেয় তবে তুমি তাঁকে আমার নাম বলবে। সে খুশি হয়ে পুষ্পটি নিয়ে যেতে দেবে।”

ইহা বলে হনুমান অদৃশ্য হয়ে গেলেন এবং ভীম প্রসন্ন মনে সরোবরে যাওয়ার রাস্তায় আগে এগোলেন। সরোবরে পৌঁছে তিনি কয়েকটি পুষ্প বেছে নিলেন। যক্ষ তাঁকে খুশি হয়ে পুষ্প বেছে নিতে সাহায্য করলেন এবং তারপর পুষ্প নিয়ে ভীম ফেরত চলে এলেন এবং পুষ্প নিয়ে দ্রৌপদীকে দিলেন। দ্রৌপদী প্রসন্ন হয়ে সেই পুষ্প নিজের বেণীতে সাজাতে আরম্ভ করলেন।

 

Translation By:
Poulami Poddar
[email protected]