Homeবাংলাভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথামাতা অঞ্জনার সাথে দেখা – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

মাতা অঞ্জনার সাথে দেখা – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

माता अंजना से भेंट (भगवान हनुमान जी की कथाएँ) - शिक्षाप्रद कथा

লংকা যুদ্ধের সমাপ্তির পর শ্রীরাম সমস্ত বানর এবং রাক্ষসদের সাথে অযোধ্যার দিকে পুষ্পক বিমানে চড়ে গমন করলেন। পথে বিমানটি কিশকিন্ধায় নীচে নামল তথা সুগ্রীবের আদেশে তাঁরা তথা অন্য সুন্দর স্ত্রীরা বৈদেহীর কাছে পৌঁছলেন। মাতা সীতার আদেশে সুগ্রীবের রানীরা শ্রীরামের রাজ্য অভিষেকের উৎসব দেখবার জন্য আসতে লাগলেন। সেই সময় হনুমান হাতজোড় করে বিনয় পুর্বক নিবেদন করলেন-“প্রভু! আমার সাথে আমার মা অঞ্জনার দেখা হবার পর অনেকদিন ব্যতীত হয়ে গেছে। যদি আদেশ দেন তবে আমি তাঁর চরণ স্পর্শ করে আসি?”

শ্রীরাম বললেন-“আমরাও সেই পুণ্যশীল মায়ের, যিনি এমন বলবান পুত্রের জন্ম দিয়েছেন তাঁর দর্শন অবশ্যই করবো।”

ভগবান রামের আদেশে বিমান অযোধ্যার পথ থেকে সরে কাঞ্চন গিরির দিকে উড়তে লাগলো। বিমানটি মাটির ওপর নামতেই হনুমানের সাথে জানকী এবং রামও নিচে নেমে এলেন। রাম, সীতা, লক্ষণ তথা বিভীষণ এবং সমস্ত বানর, ভাল্লুক এবং রাক্ষসের সাথে হনুমান অঞ্জনার কাছে গেলেন। তাঁর চোখে অশ্রু ছিল তথা কন্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে গেছিল। মাতা অঞ্জনা হনুমানকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তথা সজল চোখে তাঁর মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন।

সেই সময় শ্রীরাম সীতা তথা অন্য লোকজনও সেইখানে পৌঁছলেন। মারুতি তাঁদের সবার পরিচয় নিজের মাকে দিলেন। অঞ্জনার প্রসন্নতার কোনো পারাবার রইল না। শ্রীরাম নিজের পিতার নাম উচ্চারণ করে অঞ্জনার চরণে প্রণাম করলেন। মাতা তাঁদের বসবার জন্য উচিত আসন প্রদান করলেন। লক্ষণ, সুগ্রীব, বিভীষণ এবং সকল রাক্ষস, বানর এবং ভাল্লুক এবং তাঁদের স্ত্রীরাও মাতা অঞ্জনাকে মাথা ঝুকিয়ে প্রণাম করে আসনে বসলেন। তারপর অঞ্জনা খুব আদরের সাথে জানকীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন- “আমি অর্পিত করে দিয়েছি। সেই কারণেই ত্রিলোকের স্বামী আমার কাছে এসে আমায় কৃতার্থ করেছেন তথা আমায় মা বলে ডেকেছেন।”

হনুমান মাতা অঞ্জনার চরণে হাত দিয়ে বললেন-” মা এই করুণা মূর্তি মাতা সীতাকে দশানন হরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। শ্রীরামের আদেশে আমি সমুদ্র পার করে লঙ্কায় গিয়ে মাথা সীতার খোঁজ করেছিলাম। তারপর প্রভু রাম সমুদ্রের ওপর সেতু বানালেন এবং লঙ্কায় রাক্ষসদের সাথে ভয়ঙ্কর সংগ্রাম করলেন। মেঘনাদ, কুম্ভকর্ণ তথা রাবণের মতো মহান এবং দুর্জয় বীরদের প্রভু বধ করে বিভীষণকে লঙ্কার রাজত্ব দিয়েছেন। এখন সবাই মাতা জানকীর সাথে অযোধ্যা গমন করছেন।

হনুমানের কথা শুনে মাতা অঞ্জনা কুপিত হয়ে তাঁকে নিজের কোল থেকে ধাক্কা দিয়ে বললেন-” তুই ব্যর্থই আমার পেট থেকে জন্ম নিয়েছিস। আমি ব্যর্থই তোকে এত দুধ পান করিয়েছি। তোকে এবং তোর বল তথা পরাক্রমকে ধিক্কার। তোর মধ্যে কি এতটুকুও শক্তি ছিল না যে তুই লঙ্কায় প্রবেশ করে ত্রিকুট পর্বতকে তুলে নিয়ে সমগ্র লঙ্কাকে সমুদ্রতে ডুবিয়ে দিতি? তুই কি দুষ্ট দশাননকে তাঁর সৈনিক সহ বধ করতে পারতিস না? যদি তুই তাঁদের বধ করতে সমর্থ ছিলিনা, তবে যুদ্ধে স্বয়ংই মরে যেতি। কিন্তু তোর জীবিত থাকাকালীন শ্রীরামকে সেতু বানিয়ে রাক্ষসদের সাথে যুদ্ধ করবার জন্য কষ্ট করতে হয়েছে। তোকে আমার দুধ পান করানো ব্যর্থ হয়েছে। তুই আমার দুধকে লজ্জিত করেছিস। তোর উপর ধিক্কার। এবার থেকে তুই আমাকে নিজের মুখ আর দেখাবি না।”

মাতা অঞ্জনার ক্রোধ ভরা কথা শুনে হনুমান বললেন-” হে মা! আমি তোমার দুধকে কখনোই লজ্জিত করিনি না তোমার মহিমাময় দুধকে কখনো লজ্জিত হতে হবে। যদি আমি স্বতন্ত্র থাকতাম তবে লঙ্কা তো কি সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডকে পিষে রেখে দিতাম। রাক্ষসদের মশার মতো মেরে ফেলতাম তথা সেই সময় জানকীকে  শ্রীরামের চরণে পৌঁছে দিতাম কিন্তু জানকীর খোঁজ করবার জন্য সমুদ্রের ওপারে যাওয়ার সময় আমার নায়ক জাম্বুবান আমায় আদেশ দিয়েছিলেন যে তুমি সীতাকে দেখে তাঁর কুশল সংবাদ জেনে ফেরত চলে আসবে। হে মা! তুমি এনাদেরই জিজ্ঞেস করো, যদি আমি এই আদেশ ভঙ্গ করে দিতাম, তবে তাঁর অবজ্ঞা করা হতো। তাঁর আদেশের পালন করা আমি নিজের কর্তব্য বলে মনে করি।”

এরপর জাম্বুবান হাত জোর করে নম্রতা পূর্বক বললেন-” মাতা! হনুমান সত্য বলছেন। আপনার দুধের প্রতাপে তাঁর জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু যদি তিনি নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতেন, তবে প্রভুর যশের বিস্তার কি করে হত?”

শ্রীরামও জাম্বুবানের কথাকে অনুমোদন করলেন। মাতা অঞ্জনার ক্রোধ দূর হয়ে গেল। তিনি বললেন-“আরে পুত্র! এত সমস্ত আমি জানিনা! আমি আশ্চর্য হয়ে ছিলাম যে আমি হনুমানকে নিজের দুধ পান করিয়ে পালন করেছি। অতঃপর এ এতো কাপুরুষ কি করে হতে পারে যে তাঁর উপস্থিতিতে স্বামীকে স্বয়ং কষ্ট করতে হয়েছে?”

মাতা অঞ্জনাকে বারবার নিজের দুধের প্রশংসা করতে দেখে লক্ষণ কিছুটা আশ্চর্য হলেন। তখন অঞ্জনা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন-” লক্ষণ লাল! আপনি ভাবছেন যে এই বুড়ি বারবার নিজের দুধের এতো বড়াই কেন করছে? বাস্তবে আমার দুধ অসাধারণ? আপনি স্বয়ংই দেখে নিন।”

অঞ্জনা তখন আলাদা হয়ে নিজের স্তনে চাপ দিলেন। তাঁর দুধের ধারা পর্বত শিখরে গিয়ে পড়ল। তাতে সেই পর্বতটি ভয়ানক শব্দের সাথে ফেটে গিয়ে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেল। অঞ্জনা লক্ষণকে বললেন-

“হে লক্ষণ! এই আমার দুধই হনুমান পান করেছে। আমার দুধ কখনোই ব্যর্থ যায় না।”

তারপর শ্রীরাম মাতা অঞ্জনার থেকে হাতজোড় করে বিদায় নেবার জন্য আদেশ চাইলেন এবং অযোধ্যার দিকে প্রস্থান করলেন।

 

Translation By:
Poulami Poddar
[email protected]