Homeবাংলাভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথাঅর্জুনের গর্ব ভঙ্গ – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

অর্জুনের গর্ব ভঙ্গ – ভগবান হনুমান সম্পর্কিত কথা

अर्जुन का गर्व खंडित (भगवान हनुमान जी की कथाएँ) - शिक्षाप्रद कथा

দ্বাপর যুগে অর্জুন ভগবান শিবের তপস্যা করে তাঁকে প্রসন্ন করেছিলেন এবং তাঁর থেকে পাশুপত নামক অমোঘ অস্ত্র নিয়ে যখন হিমালয়ে পৌঁছেছিলেন তখন জঙ্গলে তাঁর সাথে এক বানরের দেখা হয়। এক সাধারণ বানর সরোবরের ধারে ভগবানের আরাধনায় মগ্ন ছিল। অর্জুন বানরের কাছে পৌঁছলেন এবং চুপচাপ বসে পড়লেন। কিছু সময় পর বানরের সমাধি ভঙ্গ হলে অর্জুন ভক্ত বানরকে দন্ডবত  প্রনাম করে জিজ্ঞাসা করলেন- “কপিরাজ, আপনি কে এবং এই নির্জন বনে কি কারণে আরাধনা করছেন?”

হনুমান বললেন- “ বৎস! জঙ্গলে বাস করা বানরের স্বভাব হয়। আর আমি প্রভু শ্রীরামের আরাধনা করছি। কিন্তু আপনি কে, কৃপা করে নিজের পরিচয় দিন।”

অর্জুন নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন-“ আমি পান্ডুপুত্র অর্জুন। ভগবান শিবের তপস্যা করতে হিমালয়ে এসেছি।”

হনুমান বললেন-“ আমি শ্রীরামের সেবক হনুমান, অর্জুন! হয়ত তুমি আমার নাম শুনে থাকবে।”

এ কথা শুনে অর্জুন পুনরায় হনুমানের চরণ বন্দনা করলেন এবং বললেন-“কিন্তু আপনার ওপর এই বার্ধক্য  কেন পবনপুত্র  ?”

হনুমান বললেন-“ কালের মহিমা অজেয় হয় অর্জুন! আমিও কালের গতির স্পর্শ থেকে অচ্ছুৎ নই। যৌবনের পর বার্ধক্য আসবেই।”

অর্জুন বললেন-“ পবনপুত্র, ভগবান রামের সময়কাল সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি ছড়িয়ে রয়েছে। আমার মনেও কিছু সন্দেহ রয়েছে, আপনি কি এগুলির নিবারণ করবেন  ? আমি ভগবান রামের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। শ্রীরাম কি বাস্তবেই এত বড় ধনুর্ধর ছিলেন যে ওনার তীরের তীক্ষ্ণতায় ব্রহ্মান্ড কেঁপে উঠত?”

হনুমান বললেন-“এতে কি সন্দেহ আছে? প্রভু রাম তো স্বয়ং সাক্ষাৎ বিষ্ণুর অবতার ছিলেন। ওনার বাণের সম্মুখে কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো।”

অর্জুন বললেন-“এবং তাও তাঁকে সমুদ্রের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য বানরদের সহায়তা নিতে হয়েছিল। যদি উনি বাস্তবেই এত বড় ধনুর্ধর ছিলেন তাহলে সমুদ্রের ওপর সেতু তো তীরের দ্বারাও নির্মাণ হতে পারত। স্বয়ং শ্রীরাম অথবা তাঁর অনুজ লক্ষ্মণের মধ্যে কি এই সামর্থ্য ছিল না ।”

হনুমান অর্জুনের অহংকার এবং ব্যঙ্গ অনুভব করতে  পারলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে অর্জুন নিজেকে রাম-লক্ষ্মণের থেকেও বড় ধনুর্ধর মনে করছেন। তিনি অর্জুনকে বোঝালেন-“শ্রীরামের জন্য সমুদ্রের ওপর সেতু নির্মাণ করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না। কিন্তু অর্জুন তুমি এটা ভাবলে না যে সেতুর উপর দিয়ে অসংখ্য বানরদের পার হতে হত। ওই সেতু এত ভার বহন করতে পারত না।”

অর্জুন বললেন-“এখানে আমি আপনার কথার সাথে সহমত নই পবনপুত্র! আর বানরদের মধ্যে এত ভার কি করে থাকত। আমি যদি চাই তো আমার তীরের দ্বারা এত শক্তিশালী একটি সেতু নির্মাণ করতে পারি যে যদি সমগ্র বানর সেনাও এর ওপর দিয়ে হেঁটে যায় তবুও সেতুটি ভাঙ্গবে না।”

হনুমান এবারে অর্জুনের গর্ব ভঙ্গ করে দেওয়াই উচিৎ মনে করল। কারণ অর্জুন নিজেকে শ্রীরামের থেকেও বড় ধনুর্ধর ভাবতে শুরু করেছিলেন। বললেন-“অর্জুন! তুমি কি নিজের তীরের দ্বারা এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে, যা এত শক্তিশালী হবে যে আমার হেঁটে যাওয়াতেও ভাঙ্গবে না?”

অর্জুন বললেন-“অবশ্যই, এটা কি কঠিন নাকি। সমনে এই জলাশয় অবস্হিত। আমি এর উপরে নিজের তীর দিয়ে সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি।আপনি এর ওপরে হেঁটে এটির পরীক্ষা করে নিতে পারেন।”

হনুমান বললেন-“যদি আমার ভারে সেতু ভেঙে যায় তো ?”

অর্জুন বললেন-“কখনোই ভাঙবে না, এটা আমার দাবি।”

হনুমান বললেন-“পুনরায় ভেবে নাও, যদি সেতু ভেঙে যায় তবে আমি নিরর্থকই গভীর জলের মধ্যে গিয়ে পড়ব।”

হনুমানের কথা শুনে অর্জুন অহংকারের সাথে বললেন-“যদি সেতু আপনার ভারে ভেঙে যায় তবে আমি শাস্তি স্বরূপ জীবন্ত অবস্থায় আগুনের মধ্যে প্রবেশ করব।”

হনুমান বললেন-“তো আমিও কথা দিলাম যে যদি তোমার বাণের দ্বারা নির্মিত সেতু আমার ভারে ভেঙে না যায় তাহলে আমি আজীবন তোমার রথের পতাকার সামনে বসে থাকব এবং যতটা সম্ভব সহায়তা করতে থাকব।”

অর্জুন তো বাস্তবেই একজন ধুরন্ধর ধনুর্ধর ছিলেন। নিজের ধনুক থেকে বাণ ছাড়তে থাকলেন। দেখতে দেখতে তীরের দ্বারা জলাশয়ের উপর একটি সেতু নির্মাণ করে দিলেন। যখনই সেতুটি নির্মাণ হল তখনই হনুমান সেতুর দিকে এগোলেন। যখনই তিনি নিজের পা সেতুর ওপরে রাখলেন তখনই তীরের দ্বারা নির্মিত সেতুটি ভরভর করে জলাশয়ের মধ্যে পড়ে গেল। হনুমান শীঘ্রই নিজের বাড়ানো পা পিছনে টেনে নিলেন।

লজ্জার কারণে অর্জুনের মুখ লাল হয়ে গেছিল। সাথে তিনি আশ্চর্যও হলেন যে তাঁর দ্বারা নির্মিত তীরের সেতু এত দুর্বল কি করে হল যে হনুমানের পা রাখার সাথে সাথেই ভেঙে পড়ে গেল।

প্রতিজ্ঞা অনুসার অর্জুন কাঠ খুঁজতে শুরু করলেন এবং খিন্ন মন নিয়ে অগ্নিদগ্ধ হবার জন্য চিতা তৈরি করতে লাগলেন। তখন জঙ্গল থেকে একজন ব্রহ্মচারী হাতে পলাশদন্ড নিয়ে ওখানে এসে পৌঁছলেন। তিনি অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলেন-“বৎস! কে তুমি আর এই কাঠগুলি কি কারণে একত্র করছ ?”

অর্জুন সমস্ত কথা শোনালেন। শুনে ব্রহ্মচারী বললেন-“তুমি বীর, নিজের দেওয়া কথার পালন করতে জানো। কিন্তু তুমি জ্ঞানীও বটে। আমায় বলো যে যখন তুমি নিজের প্রতিজ্ঞা নিচ্ছিলে তখন কোনো তৃতীয় ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে সেখানে উপস্থিত তো ছিল না ?” হতে পারে যে তোমার সাথে কেউ কপটতা করেছে ?”

ব্রহ্মচারীর কথা শুনে হনুমান আগে এগোলেন। তিনি বললেন-“আমাদের দুজনকে ছাড়া কোনো তৃতীয় ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিল না এবং বার্তালাপের মধ্যে কোনো কপটপূর্ণ কথাও হয়নি।”

ব্রহ্মচারী বললেন-“ কোনো বিবাদের নির্ণয় মধ্যস্থতা ছাড়া করা যায় না। এখন আমি সাক্ষী থাকব। তুমি অর্জুনকে পুনরায় তীরের দ্বারা সেতু নির্মাণের জন্য অনুমতি দাও। পুনরায় তুমি সেতুর উপর উঠবে। যদি সেতু ভেঙে যায় তাহলে জয় তোমার হবে।”

হনুমান সেতু নির্মাণের জন্য অনুমতি দিলেন। সহমতি পেয়ে অর্জুন দ্বিতীয় বার তীরের দ্বারা সেতু নির্মাণ করলেন। ব্রহ্মচারী হনুমানের দিকে সংকেত করে বললেন-“এবার তুমি এই সেতুর ওপর লাফাতে পারো। যদি এটা ভেঙে যায় তাহলে অর্জুন অগ্নিদাহ করবে।”

হনুমান পুনরায় নিজের পা ধীরে ধীরে সেতুর ওপর রাখল, কিন্তু সেতুর উপর কোনো প্রভাব পড়ল না। তারপর তিনি সেতুর ওপর চড়লেন, কিন্তু সেতুর উপর কোনো প্রভাব পড়ল না। তারপর তিনি দ্রুত সেতুর ওপর আগে এগোলেন। কিন্তু সেতু আগের মতোই স্হির রইল। এটা দেখে হনুমান আশ্চর্য হলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন-“ আশ্চর্য! আমার এত জোর লাগানোর পরও এইবার সেতুর ওপর কিঞ্চিৎ মাত্রও প্রভাব পড়ল না।এর মধ্যে অবশ্যই কোনো রহস্য আছে।”

এটা ভেবে যেই মাত্র তিনি সেতুর নীচে ঝুঁকে দেখলেন তখন এক বিশাল কচ্ছপ যে নিজের পিঠের ওপর সেতুটিকে টিকিয়ে রেখেছে তা তাঁর দৃষ্টিগোচর হল। হনুমান তত্ক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন যে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু ব্রহ্মচারীর বেশে তাঁর সামনে উপস্থিত রয়েছেন। তিনি চমকে উঠে ব্রহ্মচারীর মুখের দিকে তাকালেন তখন সেই রূপেও তিনি শ্রীরামকে শীঘ্রই চিনতে পারলেন এবং দৌড়ে গিয়ে তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়লেন। ব্রহ্মচারী নিজের বেশ পরিবর্তন করে নিলেন এবার তিনি শ্রীকৃষ্ণ রূপে হনুমানের সামনে উপস্থিত ছিলেন। পরিবর্তন এটাই ছিল যে এখন তাঁর হাতে তীর-ধনুকের পরিবর্তে বাঁশের দ্বারা তৈরি বাঁশি ছিল আর মাথার ওপর ময়ূরের পালক দিয়ে তৈরি মুকুট ছিল। কৃষ্ণ হনুমানকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অর্জুন যে নিজেও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শ্রীকৃষ্ণকে চিনতে পেরে তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়লেন।

কৃষ্ণ অর্জুনকে তুললেন এবং বললেন-“ওঠো অর্জুন! বিদ্যার ওপর গর্ব করা অনুচিত। তোমার মধ্যে নিজের শরীরের শক্তি নিয়ে অহংকার উৎপন্ন হয়েছে। ভালো হয়েছে যে হনুমান তোমার গর্ব ভঙ্গ করে দিয়েছে।”

অর্জুন হনুমানের থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন-“ ক্ষমা করুন পবনপুত্র! আমার নিজের ভুলের ওপরে অনুশোচনা হচ্ছে। আমি কথা দিচ্ছি এখন ভবিষ্যতে ভুলেও কখনও অহংকার করব না।”

কৃষ্ণ বললেন-“ অর্জুনের নিজের কর্মের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে পবনপুত্র, এনাকে ক্ষমা করুন।”

হনুমান বললেন-“ ক্ষমার কোনো প্রশ্নই উঠছে না প্রভু! যাঁর রক্ষক স্বয়ং আপনি বন্ধু রূপে উপস্থিত আছেন, তাঁর গর্ব করাই উচিত। ভুল আমারই হয়েছে প্রভু!”

কৃষ্ণ বললেন-“ভুল তোমাদের দুজনের মধ্যে কারুরই হয়নি। মানুষের মধ্যে উপস্থিত অহংকারই তার দ্বারা ভুল কাজ করায়। এইজন্য অহংকারকে ত্যাগ করায়ই মানুষের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ।”

অর্জুন বললেন-“আমি কথা দিচ্ছি যে কখনোই আমার মনে অহংকার উৎপন্ন হবে না।”

হনুমান বললেন-“আমার গর্ব প্রভুর আসার সাথে সাথেই খন্ডিত হয়ে গেছে। প্রভুর সামনে সাধারণ ব্যক্তির গর্ব কিসের ?”

একথা শুনে কৃষ্ণ বললেন-“চলো ঠিকই হয়েছে। তোমরা দুজন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছ। কিন্তু এবার তোমাকে নিজের প্রতিজ্ঞা পালন করতে হবে পবনপুত্র!”

হনুমান আশ্চর্য হয়ে বললেন-“কোন প্রতিজ্ঞা প্রভু ?”

কৃষ্ণ বললেন-“তুমি বড় শীঘ্র ভুলে গেছ পবনপুত্র! স্মরণ আছে যে তুমি অর্জুনের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিলে সেতু যদি না ভেঙে যায় তবে তুমি তাঁর রথের পতাকার ওপর বিরাজমান হবে এবং তাঁর যথাসম্ভব সহায়তা করবে।”

“ভালো করে মনে আছে প্রভু!”

কৃষ্ণ বললেন-“তবে শোনো, নিকট ভবিষ্যতে ভারতবর্ষে এক ভয়ানক যুদ্ধ হবে। এই যুদ্ধ সত্য এবং অসত্যের মধ্যে হবে। এতে মহা বিনাশ হবে। অসংখ্য সৈনিক মারা যাবে। শেষে সত্য অসত্যের উপর জয় লাভ করবে। এই যুদ্ধে সহায়তা রূপে তুমি অর্জুনের রথের পতাকার উপরে বসে যুদ্ধে নিরীক্ষণ করবে এবং বিনা যুদ্ধ করে অর্জুনকে যথাসম্ভব সহায়তা করবে। যাতে করে সত্যের অসত্যের উপর জয় লাভ হতে পারে।”

এবং এমনটাই হল। মহাভারতের যুদ্ধে হনুমান শেষ সময় পর্যন্ত অর্জুনের রথের পতাকার উপর বিরাজমান হয়ে তাঁর সহায়তা করেছিলেন।

 

Translation By:
Poulami Poddar
[email protected]